জাতীয়পরিবেশবাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
কালীগঞ্জে একের পর এক কৃষকের ক্ষেতের ফসল কেটে দিচ্ছে দূর্বৃত্তরা!
এবার নষ্ট করে দিল অসহায় বর্গাচাষীর ৫০ হাজার টাকার পুঁইশাক
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় একের পর এক কৃষকের ক্ষেতের ফসল কেটে দিচ্ছে দূর্বৃত্তরা। সোমবার দিবাগত রাতের আধাঁরে কালীগঞ্জ উপজেলার মালিয়াট ইউনিয়নের গয়েসপুর গ্রামের মাঠে আবারও সেই বর্গাচাষী, দরিদ্র কৃষক বাপ্পির ১৪ কাঠা বর্গা নেওয়া জমির পুঁইশাক কেটে সাবাড় করে দিয়েছে কে বা কারা। এই ১৪ কাঠা জমিতে তার প্রায় খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এবং এই জমিতে তার প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার পুঁইশাক বিক্রয় করতে পারতেন বলে জানিয়েছন কৃষক বাপ্পি মোল্ল্যা। তিনি ওই গ্রামের আনছার আলী মোল্যার ছেলে।
বাপ্পি জানান, গত-৬ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ঋণের টাকাই চাষ করা ১০ শতক জমির বেগুন ক্ষেত কেটে দিয়েছিল। তাতে তার ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছিল। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালে পুঁইশাক ক্ষেতে পুঁইশাকর মেছড়ি তুলে বাজারে বিক্রয় করার উদ্যেশে জমিতে এসে দেখি আমার ১৪ কাঠা জমির পুঁইশাক কেটে সাবাড় করেছে। এখন আমি আমার পরিবার নিয়ে কি করে বেঁচে থাকবো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বর ও পুলিশ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। স¤প্রতি কালীগঞ্জ উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে ফসলী জমির ফসল কেটে নষ্ট করার ঘটনা। দূবৃর্ত্তরা রাতের আঁধারে একের পর এক নৃশংস ভাবে ধরন্ত-ফলন্ত ক্ষেত নষ্ট করছে। কৃষকেরা ধারদেনার মাধ্যমে ফসল চাষ করার পর ভরা ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় তারা একেবারে পথে বসে যাচ্ছেন। রাতের আঁধারে কে বা কারা লোক চক্ষুর আড়ালে এমন জঘন্যতম কাজটি করছে। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্থরা নির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করতে পারছেন না। ফলে এমন ক্ষতিকর কাজ করেও মনুষ্যত্বহীন দুর্বৃত্তরা থাকছে ধরা ছোয়ার বাইরে। এদিকে প্রায়ই ক্ষেত নষ্টের ঘটনা ঘটায় সবজি ক্ষেতের মালিকেরা রয়েছেন অচেনা এক আতঙ্কে। প্রশাসন বলছে, ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, জমিজমা সংক্রান্ত গোষ্টিগত বিরোধের জেরে এমনটি হয়ে থাকে। তবে এটাকে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারা হতে পারে জানান।
ভুক্তভোগী কৃষক সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস ধরে শত্রæতা করে মানুষের অগোচরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের সবজি ক্ষেত কেটে সাবাড় করছে। পুকুরে কখনও কীটনাশক দিয়ে আবার গ্যাস বড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছ নিধন করছে। কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করলেও সমাজের গুটি কয়েক দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ দ্বারা স্বপ্ন ভাঙছে তাদের। তারা বলছেন, শত্রæতার মাধ্যমে কৃষকের ভরা ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। এটা মনুষ্যত্বহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত ২০ জুন বাবরা গ্রামের আলী বকসের ২ ছেলে কৃষক টিপু সুলতান ও শহিদুল ইসলামের দুই ভায়ের ১৫ কাঠা জমির কাঁদিওয়ালা কলাগাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। একইভাবে ৩ জুলাই মল্লিকপুর গ্রামের মল্লিক মন্ডলের ছেলে সবজি চাষী মাজেদুল মন্ডলের বেথুলী মাঠের আড়াই বিঘা জমির ৩ শতাধিক ধরন্ত পেপে গাছ কেটে দেয়। এর ঠিক ৪ দিন পরে ৭ জুলাই পৌর এলাকার ফয়লা গ্রামের তাকের হোসেনের ছেলে আবু সাঈদের ১৫ শতক জমির ধরন্ত করলা ক্ষেত কেটে দেয়। ১৩ জুলাই বারোবাজারের ঘোপ গ্রামের মাহতাব মুন্সির ছেলে আবদুর রশিদের দেড় বিঘা জমির সিমগাছে কীটনাশক স্প্রে করে পুড়িয়ে দেয়। ৯ আগস্ট তিল্লা গ্রামের সতীশ বিশ্বাসের ছেলে কৃষক বিকাশ বিশ্বাসের ১৫ শতক ধরন্ত করলা ক্ষেত কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২৮ আগস্ট সাইটবাড়িয়া গ্রামের মাছচাষী ইউপি সদস্য কবিরুল ইসলাম নান্নুর পুকুরে গ্যাস বড়ি দিয়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধন করে। এর ৩ দিন পর ৩১ আগস্ট একই ইউনিয়নের রাড়িপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্যের ৪৮ শতক মুল্যবান দার্জিলিং লেবু ও থাই পেয়ারার কলম কেটে দেয় দূর্বৃত্তরা।
এর আগে ২৫ আগস্ট বলরামপুর গ্রামের মাছচাষী মমরেজ আলীর পুকুরে একইভাবে বিষ দিয়ে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার মাছ মেরে দেয়। গত-সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার চাপলি গ্রামের বর্গাচাষী আতিয়ার রহমানের ৫০ শতক জমির লাউ ক্ষেতের সবুজ গাছগুলো কেটে দেয় দুবৃত্তরা। তার জমিতে তার ২৫০ টি লাউ গাছ ছিল। যেগুলোতে লাউ আসতে শুরু করেছিল। তার দাবি এতে তার কমপক্ষে আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত-শনিবার (১০ অক্টোবর) দিবাগত রাতে উপজেলার ৫নং শিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের বড় শিমলা গ্রামের নূর ইসলামের এক বিঘা জমিতে ৪০০ ধরন্ত লাউগাছ কেটে দেয় দূর্বৃত্তরা। এতে ওই কৃষকের কমপক্ষে প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিকদার মোহাইমেন আকতার জানান, আমার কাছে উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ফোন দিয়েছিল আমরা সবাই ট্রেনিং এ আছি বিকালে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষেতে সরজমিনে যেয়ে দেখবো। কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহাফুজুর রহমান মিয়া জানান, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষককে থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। মামলার পর তদন্তপূর্বক যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।