ক্রিকেটক্রিকেটখেলাধূলাবাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
১৬ কোটির প্রাণ সাকিব আল হাসান, আরো ৮-১০ বছর ক্রিকেট খেলতে চান
জেড.আই.জহির, নিউজরুমবিডি.কম : বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এখানেই সীমাবদ্ধ নন দেশসেরা ক্রিকেটার, হয়েছেন তিন সংস্করণেই বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার। গড়েছেন অনেক রেকর্ড, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। সামনেই অপেক্ষায় আরেকটি মাইলফলক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট হতে যাচ্ছে তার ৫০তম টেস্ট। এই অর্জনগুলোতে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন তিনি। কারো মতে বাংলাদেশ নামটি সারাবিশ্বে বাহন করেন ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত পরিসরের টি-টোয়েন্টি লিগ খেলে।
গেল ৬ আগস্ট ১১ বছরের আন্তর্জাতিক বর্ণিল ক্যারিয়ার ছাপিয়ে ১২ বছরে পদার্পন করেছেন। ১১ বছরের পথচলায় পেরিয়েছেন অনেক মাইলফলক। তার অগণিত ভক্ত তার ভালো কিংবা খারাপ সময়ে পাশে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তৈরি করেছেন ফ্যানগ্রুপ। নাম তার, ‘১৬ কোটি মানুষের প্রাণ সাকিব আল হাসান।’ আর এই ফ্যান গ্রুপের সদস্যরা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২ বছরে পদার্পণ করায় সংবর্ধনা দেয়।
রবিবার মিরপুর এক নম্বরে সাকিব আল হাসান ও ইমরুল কায়েসের যৌথ মালিকানায় ‘সাকিব’স ৭৫’ রেস্টুরেন্টে এই সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলা। এতে সারা দেশ থেকে প্রায় ৮৫ সাকিবের পাগল ভক্ত উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রত্যেক ভক্তের গায়ে গ্রুপের নাম ও লোগো সম্বলিত ছিল কমলা রংয়ের পোলো টি-শার্ট। যার পেছনে লেখা সাকিবের জার্সি নম্বর ৭৫। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাকিব আল হাসান পৌছালেই ভক্তরা দাঁড়িয়ে ‘সাকিবীয় স্যালুট’ প্রদান করেন!
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়েও খোলামেলা কথা বলেছেন সাকিব আল হাসান। তিন ভক্ত সুযোগ পেয়েছিলেন প্রিয় ক্রিকেটারকে প্রশ্ন করার। কিছু প্রশ্ন করেছেন উপস্থিত সংবাদকর্মীরাও।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের পথচলার পূর্ণ হলো ১১ বছর। চলবে কতদিন?
সাকিব : খুব বেশি পরিকল্পনা করিনি। বেশি পরিকল্পনা কখনোই করি না। দলের হয়ে পারফর্ম করার চেষ্টা করি। যতদিন পারফর্ম করব, ততদিন খেলব। এছাড়া তেমন কোনো পরিকল্পনা থাকে না আমার। আমি সিরিজ বাই সিরিজ চিন্তা করি। সুনিশ্চিত বলতে পারব না কতদিন খেলতে চাই বা খেলব। আশা থাকবে এখনও ৮-১০ বছর ক্রিকেট খেলার।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই প্রথম টেস্ট খেলবেন আপনার এবং দলের প্রত্যাশা?
সাকিব : আমরা যখনই খেলি, সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে। এবারও আছে। ওরা ভালো দল। অস্ট্রেলিয়ার মত দল সবসময়ই বিপজ্জনক। আমাদের জন্য কঠিন একটি সিরিজ অপেক্ষা করছে। এটাও বলব, আমরাও প্রস্তত। যেহেতু আমাদের গত কিছুদিনের পারফরম্যান্স ভালো, সেদিক থেকে আমরা দারুণ আত্মবিশ্বাসী। আশা করি, খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি সিরিজ হবে।
দলে মুমিনুলের অভাববোধ করবেন কি?
সাকিব : মুমিনুল আমাদের দলের সেরাদের একজন। তার অনুপস্থিতি (প্রথম স্কোয়াড ঘোষণায়) আমাদের মানসিকভাবে পিছিয়ে রাখবে। যদি কোচিং স্টাফ এবং নির্বাচকরা মনে করেন যে এই দলটাই সেরা। তাতেও আপত্তি নেই। আমাদের লক্ষ্য থাকবে ভালো খেলা এবং জয় তুলে নেয়া। নানা মুনির নানা মত। তবে দিন শেষে সবারই চাওয়া, বাংলাদেশ ভালো খেলুক এবং জিতুক।
১১ বছরের ক্যারিয়ারে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি কিংবা সেরা সাফল্য কোনটা?
সাকিব : ১২ বছরের ক্যারিয়ারের সেরা প্রাপ্তি বলতে আমার স্ত্রী ও সন্তান। আমার ক্যারিয়ার এতদূরে আসার পেছনে বউয়ের অনেক বড় অবদান আছে। সন্তান আসার পর থেকে তো পুরো জীবনটাই বদলে গেছে।
আরো বলেন, অপ্রাপ্তি তো দেখি না। বাংলাদেশ দল যা করেছে সবই প্রাপ্তি আমাদের। দুইটা ট্রফি পেলে ভালো হতো। যেহেতু আমরা দুইটার ফাইনালে গিয়েছি। তবে সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের উন্নতির ধারাটা উর্ধ্বমুখী। আশা করি ভবিষ্যতে ট্রফি জিতব।
ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মাঝে মধ্যই সমালোচনার শিকার হন। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
সাকিব : দেখি না (হাসি)।
সমর্থকদের উদ্দেশে কী বলবেন?
সাকিব : শুধু আমাকে নয়, পুরো বাংলাদেশ দলকে অনুপ্রাণিত করে। অনেক সমস্যার মধ্যেও ভক্তরা যেভাবে সমর্থন দেয়, তা অকল্পনীয়। খারাপ সময়ে সমর্থন অনেক কাজে আসে, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। ক্রিকেট বোর্ড সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আর আপনারাও (সাংবাদিকরা) অনুপ্রাণিত করেন আমাকে।
গ্রুপের অ্যাডমিন আকরামুল আলম টিটো’র আলাদিনের চেরাগ পেলে কি করবেন প্রশ্নে?
সাকিব : এটা চিন্তার বিষয়। টাকা যে চাইবো, এটা নিশ্চিত (হাঁসি)। কারণ টাকা থাকলে সব কিছু করা সম্ভব। সিরিয়াসলি বলব, দেশকে কীভাবে সুন্দর করে সাজানো যায়। ক্রিকেটে আরও উন্নতি করা যায়। দুইটা গেল। আরেকটা চিন্তা করে বলতে হবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রশ্নত্তোর পর্ব শেষে, বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের হাতে গ্রুপের পক্ষে তুলে দেওয়া হয় সন্মাননা ক্রেস্ট, ১২ বছরে পদার্পনে কাটা হয় কেকও। সাকিব নিজ হাতে উপস্থিত সকল ভক্তের গলায় পরিয়ে দেন গ্রুপের পরিচয়পত্র। এ ছাড়া কবিতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হৃদয় হাসানের হাতে তুলে দেন গ্রুপের অফিসিয়াল জার্সি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শুধু ভক্তরাই নয় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস সাগর। অনুষ্ঠান সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন ১৬ কোটি মানুষের প্রাণ সাকিব আল হাসান গ্রুপের সিনিয়র অ্যাডমিন সুমন আহমেদ ও ক্রিকেট রঙ গ্রুপের অ্যাডমিন উম্মে হাবিবা মিষ্টি। অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল-৭ এর স্পোর্টস রিপোর্টার দিবাকর বিশ্বাস, তামিমিয়ান্স ফ্যান্স অব তামিম গ্রুপের চেয়ারম্যান জেড.আই জহির, ক্রিকেট রঙ গ্রুপের সিনিয়র অ্যাডমিন রাশেদুল ইসলাম রাশেদ এবং দেশের সব পর্যায়ের গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরাও।