বাংলাদেশ
ঝিনাইদহে লোককবি পাগলা কানাইয়ের ১২৮তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ‘মরণের আগে মরো, সমনকে শান্ত করো, যদি তাই করতে পারো, ভরপারে যাবিরে মন রসনা, অথবা জিন্দা দেহে মুরদার বসন, থাকতে কেন পর না / মন তুমি মরার ভাব জানো না’- এমনই হাজারো আধ্যাত্মিক ও দেহতত্ব বাউল গানের রচয়িতা মরমি কবি পাগলা কানাইয়ের ১২৮তম মৃত্যু বার্ষিকী বুধবার পালিত হয়।
দিবসটি পালন উপলক্ষে বুধবার দুপুরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেড়বাড়ি গ্রামে কবির মাজার জিয়ারত, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ ও কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতি স্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হয়। সন্ধায় আলোাচনা সভা এবং পাগলা কানাই রচিত সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেরবাড়ি গ্রামে ‘পাগলা কানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ’ দিনব্যাপী এসব কর্মসূচি আয়োজন করে। পাগলা কানাই স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ জানান, বিকেলের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন।
এছাড়া ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আসাদুজ্জামান, জেলা পরিষদের সচিব রেজাই রাফিন সরকার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কবির হাজারো ভক্ত অনুরাগীরা কবির মাজার প্রাঙ্গনে সমাবেশ হতে থাকে। জানা গেছে, পাগলা কানাই ছিলেন লালন পরবর্তী বাংলার অন্যতম মরমী সাধক ও লোককবি।
তিনি ১৮০৯ সালের মার্চ মাস মোতাবেক ১২১৬ সালের ২৫ ফাল্গুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লেবুতলা মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম ছিল মেছের আলী ও মা মোমেনা খাতুন। কৈশোরে বাবার মৃত্যুর পর কানাই মামাবাড়ি বেড়বাড়ি গ্রামে চলে আসেন। সেখানে তিনি গবাদি পশু রাখতেন। এ সময় তিনি আধ্যাত্মিক সাধক ও একাধিক বাউল শিল্পীর সংস্পর্শে আসেন। এরপর তিনি নিজেই রচনা করতে থাকেন একের পর এক আত্যাধিক ও দেহতত্ব গান। প্রথমা বস্থায় তার গানের শ্রোতা ছিলেন রাখালরা।
কানাইয়ের গানে মুগ্ধ রাখালেরা তাকে ‘পাগলা কানাই’ বলে ডাকতেন। অল্পদিনেই রাখালদের ছাড়িয়ে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দূর-দূরান্তে। আধ্যাত্মিক গান রচনা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশনের মাধ্যমে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন পাগলা কানাই। প্রায় ৮০ বছরের জীবদ্দশায় কানাই প্রায় তিন হাজার আধ্যত্মিক ও ভক্তিমুলক সঙ্গীত এবং কবিতা রচনা করে গেছেন। তার রচিত গানের মধ্যে রয়েছে পালাগান, জারিগান, ধুয়াগান, কবিগান, মুর্শিদি, মারফতি গান।
১৮৮৯ সালের ১২ জুলাই মোতাবেক ১২৯৬ সালের ২৮ আষাঢ় এই মরমী সাধক ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পর পাগলা কানাইকে মামাবাড়ি বেড়বাড়ি গ্রামে দাফন করেন। সেখানেই সরকারিভাবে তৈরি করা হয়েছে ‘পাগলা কানাই স্মৃতি অডিটরিয়াম’। বিপুল জনপ্রিয়তা এবং বাংলা গানে অসাধারণ অবদান রাখা সত্তে¡ও পাগলা কানাই রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিতই থেকে গেছেন বলে তার ভক্তদের অভিযোগ।