ক্যাম্পাসবাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী গবেষকের কক্ষে সাবেক উপ-উপাচার্যের ছেলে!
শফিকুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের (আইবিএস) হোস্টেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের প্রোগ্রামার মুহম্মদ আবদুল্লাহ ফারুককে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করায় এক নারী গবেষকের সিট বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। ওই প্রোগ্রামার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ নূরুল্লাহ’র ছেলে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে আইবিএস কর্তৃপক্ষ ওই নারী গবেষকের কক্ষের বাথরুমে ফারুককে খুঁজে পায়। বিষয়টি আইবিএসের নিয়ম পরিপন্থী হওয়ার কারণে দুপুরেই হোস্টেল থেকে ওই নারী গবেষকের সিট বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।
আইবিএস সূত্রে জানা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে আইবিএস এ এমফিল করছেন ওই নারী গবেষক। আইবিএস হোস্টেলের ১০৯ নম্বর কক্ষে তার আবাসিকতা ছিল।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আবদুল্লাহ ফারুক আইবিএস হোস্টেলের ওই কক্ষে প্রবেশ করেন। বিষয়টি তখনই দেখে ফেলেন বাগানে কাজ করা একজন মালি। এর ঘণ্টা খানেক পর ওই মালি আইবিএস কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। পরে আইবিএস হোস্টেলের ওয়ার্ডেন ড. মো. কামরুজ্জামান, আইবিএসের পরিচালক অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার ও ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. জিয়াউদ্দিনসহ অনেকে গিয়ে ওই কক্ষ সংলগ্ন বাথরুমে ফারুককে দেখতে পান ।
পরে ওই কক্ষে বসেই ফারুকের থেকে একটি লিখিত অঙ্গীকারনামা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই ওই নারী গবেষকের কক্ষে কেনো পুরুষ প্রবেশ করলো এবং সে কারণে কেনো তার হোস্টেলের সিট বাতিল করা হবে না এ মর্মে ওই নারী গবেষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার পর ওই নারী গবেষক হোস্টেল ওয়ার্ডেনের কাছে এর লিখিত জবাব দেন। জবাব পাওয়ার পর হোস্টেলের ওয়ার্ডেন বিধি অনুযায়ী ওই গবেষকের আবাসিকতা বাতিল করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি সেন্টারের প্রোগ্রামার মুহম্মদ আবদুল্লাহ ফারুক বলেন, ‘সেখানে আমি ইন্টারনেটের কাজ করার জন্য গিয়েছিলাম।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইবিএস হোস্টেলের ওয়ার্ডেন ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আইবিএসের পরিচালক ও সচিবসহ ওই কক্ষটি পরিদর্শনে গিয়ে কক্ষটি ভেতর থেকে বন্ধ অবস্থায় দেখনে পাই। এসময় দরজায় কড়া নারার পরে ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয়া হয়। রুমের ভেতরে গিয়ে শুধু ওই নারী গবেষককে দেখতে পাওয়া যায়। পরে ওই কক্ষ সংলগ্ন বাথরুমে খোঁজ করে মুহম্মদ আবদুল্লাহ ফারুক নামে এক ব্যক্তিকে সেখানে পাওয়া যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী হোস্টেলের কোনো নারী গবেষকের কক্ষে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো পুরুষ প্রবেশ করতে পারেন না। কিন্তু বিশ্বিবিদ্যালয়ের আইসটি সেন্টারের প্রোগ্রামার হিসেবে কর্মরত আবদুল্লাহ ফারুক কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই ওই গবেষকের কক্ষে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করেছে। তাই আইবিএস হোস্টেলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হওয়ায় ওই নারী গবেষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশের জবাব পাওয়ার পরই হোস্টেল থেকে তার আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ, মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুহম্মদ নূরুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভঙ্গ করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করা তাঁর সন্তান আবদুল্লাহ ফারুককে প্রোগ্রাম হিসেবে নিয়োগ দেন। বিষয়টি ওই সময়ে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিল।