uncategorized
ফুলবাড়ীতে শিবনগর ইউনিয়নের নির্বাচনী হালচাল
মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আগামী ৩১ মার্চ ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে সরজমিনে ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে নির্বাচনী হালচাল এর ধারাবাহিক রিপোর্টের আজ শেষ পর্ব ৭নং শিবনগর ইউনিয়ন।
৭নং শিবনগর ইউনিয়ন ২৩,৪৯০ জন ভোটারের বিপরীতে চেয়ারম্যান পদে ৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। ফুলবাড়ী উপজেলার আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন, ভোটার সংখ্যাও সবচেয়ে বেশী। তাই এই ইউনিয়নের নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্ব বহন করে।
৭নং শিবনগর ইউনিয়ন থেকে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মোঃ হারুনুর রশীদ (নৌকা), বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রভাষক মোঃ মেহেদী হাসান সাজু (ধানের শীষ), আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মামুনুর রহমান বিপ্লব চৌধুরী (মোটরসাইকেল) ও আওয়ামীগের অপর বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ রফিকুল ইসলাম মন্টু (আনারস)।
আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মোঃ হারুনুর রশীদ (নৌকা) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা একত্রিত হয়ে প্রচারণায় ভোট যুদ্ধের মাঠে নেমেছে। আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা ও মোঃ হারুনুর রশীদ এর কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন গত উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ হারুনুর রশীদ ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। যেসব উন্নয়ন কর্মকান্ড অসমাপ্ত রয়ে গেছে তার ধারাবাহিকতা এবং স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সরকারী দল মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মোঃ হারুনুর রশীদ কে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে ব্যাপক উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে। তাই এই ইউনিয়নের ভোটাররা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।
অপরদিকে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রভাষক মোঃ মেহেদী হাসান সাজু (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের বিএনপি-জামায়াত সহ ২০ দলীয় জোটের সকল নেতা-কর্মীরা প্রথম থেকেই একত্রিত হয়ে প্রচারণায় নেমেছে। এমনকি সাবেক সংসদ সদস্য এ.জেড. এম. রেজওয়ানুল হক সহ ফুলবাড়ী উপজেলার বিএনপি’র সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খুরশিদ আলম মতি সহ ফুলবাড়ী উপজেলার ২০ দলীয় জোটের সকল নেতা-কর্মীরা প্রচারণায় নেমেছে। বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা মনে করেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ হারুনুর রশীদ নির্বাচিত হওয়ার পর আশানুরূপ উন্নয়ন কর্মকান্ড করতে পারে নাই। প্রভাষক মোঃ মেহেদী হাসান সাজু এর বড় ভাই মরহূম রাজু ৯ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন, মরহূম রাজু চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় এই ইউনিয়নের অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। এই পরিবারের প্রতি এই ইউনিয়নের ভোটারদের একটা আস্থা আছে। আবার এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ২জন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় এমনিতেই একটা সুবিধা জনক অবস্থায় আছে। তাই এবার প্রভাষক মোঃ মেহেদী হাসান সাজু কে ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিয়ে জয়ী করবে।
অপরদিকে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মামুনুর রহমান বিপ্লব চৌধুরী (মোটরসাইকেল) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ৭নং শিবনগর ইউনিয়ন ঘুরে বিপ্লব চৌধুরীর মোটরসাইকেল মার্কার ব্যাপক কর্মী-সমর্থকদের দেখা গেছে। মোঃ মামুনুর রহমান বিপ্লব চৌধুরীর মোটরসাইকেল মার্কার কর্মী-সমর্থকরা জানান, এবারের নির্বাচনে দল-মত নির্বিশেষে বিপ্লব চৌধুরীর মোটরসাইকেল মার্কার ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা আরও জানান, আওয়ামীলীগের একনিষ্ট নেতা বিপ্লব চৌধুরী আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্দ, আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা বিপ্লব চৌধুরীর পক্ষে কাজ করছে বলে তারা দাবী করে। তাই আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীসহ দল-মত নির্বিশেষে ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের ভোটাররা তাকে মোটরসাইকেল মার্কায় ভোট দিয়ে বিপূল ভোটে নির্বাচিত করবে।
অপর আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ রফিকুল ইসলাম মন্টু (আনারস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। মোঃ রফিকুল ইসলাম মন্টু এর আনারস মার্কার কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন গত উপ-নির্বাচনে মোঃ রফিকুল ইসলাম মন্টু অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। মোঃ রফিকুল ইসলাম মন্টু এর বাবা মরহূম ঢেপা চেয়ারম্যান বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় এই ইউনিয়নের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। ঢেপা চেয়ারম্যান ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের উন্নয়নের রূপকার। তার ছেলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে। তাই ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের ভোটাররা মন্টু ভাই কে আনারস মার্কায় ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবে।
সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ হারুনুর রশীদ গত উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই। তবে দলীয় নির্বাচন হওয়ায় মোঃ হারুনুর রশীদ নতুন আওয়ামীলীগে যোগদান করে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়ায় অনেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী তার পক্ষে কাজ করছে না। ভোটের হিসেব-নিকেশে এটা একটা কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। আবার বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ হারুনুর রশীদ এর বিএনপি’র অনেক ভোটার তাকে পছন্দ করে কিন্তু দলীয় প্রতীক নৌকা মার্কা হওয়ায় তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তবে তার বাড়ী ৯নং ওয়ার্ডে ভালো অবস্থা, ৭নং ও ৮নং ওয়ার্ডে তার মোটামুটি ভালো অবস্থা এবং শিবনগর এলাকায় যদি মোটামুটি ভালো অবস্থা তৈরী হয় তাহলে মোঃ হারুনুর রশীদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারে।
সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে প্রভাষক মোঃ মেহেদী হাসান সাজুর ভোটের মাঠে অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়, তার বাড়ী শিবনগর এলাকায় হওয়ায় সেখানে ভালো অবস্থা বিরাজ করছে কিন্তু অন্যান্য এলাকায় তার অবস্থান খুব একটা ভালো নাই। তাই তার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া অনেক কঠিন হতে পারে। তবে বিএনপি-জামায়াত সহ ২০ দলীয় জোটের সকল নেতা-কর্মী, সমর্থকরা মোঃ মেহেদী হাসান সাজুর ধানের শীষ মার্কায় ভোট দেয়, তবেই তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারে।
আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মামুনুর রহমান বিপ্লব চৌধুরী ভোটের মাঠের অবস্থান সম্পর্কে সাধারণ ভোটাররা জানান, আওয়ামীলীগের একনিষ্ট নেতা বিপ্লব চৌধুরী আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্দ, আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা বিপ্লব চৌধুরীর পক্ষে কাজ করছে বলে জানান তারা। অনেক আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা নৌকা মার্কার কাজ করছে দলীয় নির্দেশনার কারণে, তারা বিপ্লব চৌধুরীর মোটরসাইকেল মার্কায় ভোট দিবে। বিপ্লব চৌধুরী সম্পর্কে সাধারণ ভোটারদের আর একটা আবেগ কাজ করতেছে যে, বিপ্লব চৌধুরী দুই দুই বার নির্বাচনে হেরে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাই এবার তাকে ভোট দিবে। রাজারামপুর, আদর্শ কলেজ কেন্দ্র এলাকায় বিপ্লব চৌধুরীর বাড়ী হওয়ায় সেখানে ভালো অবস্থা, শমশের নগর, গংগাপ্রসাদ, আমডুঙ্গী এলাকায় ভালো অবস্থা, বাসুদেবপুর, বুড়াবন্দর, গুচ্ছ গ্রাম এলাকায় তার অবস্থান খুব একটা ভালো নয়, জাফরপুর, শিবনগর এলাকায় যদি মোটামুটি ভালো অবস্থা তৈরী হয় তাহলে বিপ্লব চৌধুরীর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারে।
অপর আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ রফিকুল ইসলাম মন্টুর আনারস মার্কার ভোটের মাঠের অবস্থান সম্পর্কে সাধারণ ভোটাররা জানান, মোঃ রফিকুল ইসলাম মন্টু এর বাবা মরহূম ঢেপা চেয়ারম্যান বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় এই ইউনিয়নের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। ঢেপা চেয়ারম্যান ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের উন্নয়নের রূপকার। তার কথা বিবেচনা করে মোঃ রফিকুল ইসলাম মন্টুর আনারস মার্কায় অনেকেই ভোট দিতে পারে। বাসুদেবপুর, বুড়াবন্দর, গুচ্ছ গ্রাম এলাকায় মোঃ রফিকুল ইসলাম মন্টুর ভোট ব্যাংক হিসেবে জানে তাই সেখানে তার অবস্থান ভালো, অন্যান্য এলাকায় তার অবস্থান খুব একটা ভালো নয়। তবে অন্যান্য এলাকায় যদি তার অবস্থান ভালো করতে পারে তাহলে মোঃ রফিকুল ইসলাম মন্টু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে অবাক হওয়ার কিছু নাই।
আবার অধিকাংশ ভোটার মনে করছেন আওয়ামীলীগ, ও দুই আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যেই সমান লড়াই হবে।