তার নামের আগে উচ্চারিত হয় ‘প্লেব্যাক সম্রাট’। বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গণে বহু কালজয়ী গান তিনি উপহার দিয়েছেন। যেসব গান মাটি ও মানুষের হয়ে আছে। সেই গায়কের নাম এন্ড্রু কিশোর। আজ তার ৬৪তম জন্মদিন।
১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্মদিনে ভক্ত অনুরাগীদের ভালোবাসা মাখা শুভেচ্ছায় ভাসছেন এই কিংবদন্তি গায়ক।
তবে সবার মন খারাপ। প্রিয় শিল্পী তার জন্মদিনে দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে, অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন হাসপাতালের বিছানায়। বন্ধু স্বজনহীন সুস্থতার অপেক্ষায় কাটছে তার দিন।
ক্যান্সারে আক্রান্ত এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসা চলছে সুদূর সিঙ্গাপুরে। দেশটির জেনারেল হাসপাতালে গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। ১২ সেপ্টেম্বর তার বায়োপসি করা হয়। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে ১৮টি কেমোথেরাপি দিতে হবে!
জানা গেছে, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে কেমোথেরাপিসহ অন্যান্য চিকিৎসার জন্য মাসের কিছুদিন হাসপাতালের কেবিন থেকে বাকি দিনগুলো সিঙ্গাপুর ওয়েন রোডের শাহেদ অ্যাপার্টমেন্টে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন তিনি। সেখানে তার সঙ্গে আছেন পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
চিকিৎসা ও কেমোথেরাপি শেষ করে আবারও গানের ভুবনে ফিরে আসবেন এন্ড্রু কিশোর এটাই প্রত্যাশা সবার। শক্ত মনোবলের মানুষ এই শিল্পীও জীবনটাকে নতুন করে শুরু করতে চান। জন্মদিনে তাই দেশবাসীর দোয়া চাইলেন তিনি।
রাজশাহীতে জন্ম নেয়া এন্ড্রু কিশোর সেখানেই বেড়ে উঠেছেন। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা গানের এই প্লেব্যাক সম্রাট চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সুরের জাদুতে সঙ্গীতপ্রেমীদের মাতিয়ে রেখেছেন। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে সঙ্গীতের পাঠ শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধকসহ প্রায় সব ধারার গানে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন তিনি।
তার চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ড করা দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধারাক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতিজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানে প্রথম দর্শক তার গান শোনেন। গানটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে।
বাংলা চলচ্চিত্রের গানে তাকে বলা যেতে পারে এক মহাসমুদ্র। কয়েক দশক ধরে সেই সমুদ্রে সাঁতার কেটে চলেছেন শ্রোতারা। তার কণ্ঠ মধু ছড়ায়, তার শত শত গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, প্রেম-বিরহ সব অনুভূতির গানই তিনি গেয়েছেন। তার কণ্ঠের অমীয় সুধায় পাগলপারা দেশের মানুষ। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যে খানে, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমার ছুঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি, সবাইতো ভালোবাসা চায়, বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে, তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন, ভালো আছি ভালো থেকো, তুমি মোর জীবনের ভাবনা, চোখ যে মনের কথা বলে, পড়েনা চোখের পলক ইত্যাদি।
বাংলা গানের এই কিংবদন্তি ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।