নিউজরুমবিডিঃ গান এবং উপন্যাস, গল্প, কবিতা শিল্প সংস্কৃতির দুটি শাখা। কিন্তু একটু গভীরে ভাবলেই দেখতে পাবেন এদের উৎপত্তি স্থল কিন্তু এক। গানের আলাদা কিছু ব্যাকারণ থাকলেও গান ও কবিতা এক মায়ের পেটের যেন দুই ভাই। কেননা কবিতাকে সুর দিলেই তা হয়ে যাচ্ছে গান আর গানের লিরিকে সুর না বসালেই তা বেমালুম যেন কবিতা। কিন্তু তবুও অনেকে গীতিকবিতাকে সাহিত্য এবং গীতিকারকে সাহিত্যিকের কাতারে ফেলতে নারাজ। কিন্তু তাতে কার কি? অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবার রাজত্ব কিন্তু গানের মানুষদেরই। শুধু এবার না, বেশ কয়েক বছর ধরেই গানের মানুষ হিসেবে খ্যাত লেখকগণ বইয়ের বাজারে নিজেদের লেখার তেজ দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং আধিপত্যের জানান দিচ্ছেন। এবারের বইমেলাতে তার ব্যাতিক্রমতো ঘটেইনি বরং তাদের আধিপত্য যেন আরও বেশ পাকাপোক্ত হয়েছে। বইমেলাতে আধিপত্য বিস্তারকারী এমন কয়েকজন গানের মানুষদের নিয়ে নিউজরুমবিডির আজকের আয়োজন।
মারজুক রাসেলঃ শুরুটা মারজুক রাসেলকে দিয়েই করা যাক। বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের অসংখ্য ধুন্ধুমার জনপ্রিয় এবং কথানির্ভর গানের গীতিকবি এই মারজুক রাসেল। মীরা বাঈ, আমিতো প্রেমে পড়িনি, আড়ালে কেউ কলকাঠি নাড়ছে, দ্বিধা সহ অগণিত জনপ্রিয় গানের জনক মারজুক কিন্তু শুধু গানেই সফল না। অভিনয়েও তিনি আপন প্রতিভায় তরুণদের বুদ করে রেখেছেন এক দশকেরও বেশী সময় ধরে। বর্তমানে চলমান ধারাবাহিক নাটক ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তবে গীতিকবি ও অভিনেতার বাইরে তার আরও একটি শক্তিশালী পরিচয় রয়েছে।
মারজুক রাসেল একজন কবি। কবি হিসেবেও তিনি অন্যদের চেয়ে আলাদা এবং এখানেও তিনি তার মতো। দীর্ঘ পনেরো বছর পর এই কবির কাব্যগ্রন্থ ‘দেহবন্টনবিষয়ক দ্বপক্ষীয় চুক্তি সাক্ষর’ এসেছে এবছর বইমেলায়। বইটি প্রকাশ করেছে বায়ান্ন প্রকাশনী। প্রথম প্রথম মারজুকের বই কারও মাথা ব্যাথার কারণ না হলেও এক ঘন্টায় বায়ান্ন’র স্টলে রাখা মারজুকের সব বই স্টক আউট হয়ে যাওয়া এবং বইমেলায় তাকে ঘিরে হাজার হাজার ভক্তের মিছিল ও উন্মাদনা দেখে মনে হয় পুরো বইমেলাই যেন তিনি নিয়ে নিয়েছেন। আর এর ফলস্বরুপ মেলার প্রথম ০৯ দিনেই মারজুকের কবিতার বই ‘দেহবন্টনবিষয়ক দ্বপক্ষীয় চুক্তি সাক্ষর’ বিক্রি হয়েছে নয় হাজার।
যেখানে ‘কবিতার বই বিক্রিই হয়না’ এমন কথা সুপ্রতিষ্ঠিত সেখানে বাংলা গানের দাপুটে গীতিকার, ভ্যাগাবন্ড কবি ও অনেক কিছু ছাইড়া আসা লোকের কবিতার বই ছোট একটি প্রকাশনী থেকে মুড়ির মতো বিক্রি হচ্ছে! এ যেন কবি ও কবিতার জন্যও নতুন আশার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
লতিফুল ইসলাম শিবলীঃ এবার আসি বাংলা গানের আরেক দিকপাল, গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলীর কথায়। বাংলা ব্যান্ডের কিংবদন্তী গায়ক আইয়ুব বাচ্চু, জেমসের অনেক বিখ্যাত গানই এই গীতিকবির লেখা। আমি আর এক ফালি নিষ্পাপ চাঁদ, পালাবে কোথায়, প্রিয় আকাশী, জেল থেকে বলছি সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী একাধারে একজন কবি, উপন্যাসিক ও অভিনেতা। বাংলা গানের এই কিংবদন্তী গীতিকবি যেমন বাংলা সংগীতকে দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান তেমনই বাংলা সাহিত্যকেও দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক শক্তিশালী ও পাঠকপ্রিয় উপন্যাস। এবারের বইমেলায় তিনি নিয়ে এসেছেন তার নতুন বই ‘রাখাল’।
আসমান, দারবিশ, দখলের মতো শিবলীর রাখালও দখল করে নিয়েছে পাঠকদের মন, পাঠকপ্রিয় ও শীর্ষস্থানীয় লেখকের স্থান। কেননা বরাবরের মতো এবারও শিবলীর বই রয়েছে পাঠকদের পছন্দের শীর্ষে। বইটির প্রকাশনী নালন্দার স্টলে সর্বাধিক বিক্রিত বইগুলোর একটি শিবলীর ‘রাখাল’। পাঠকদের চাহিদার কথা ভেবে একসাথে পাঁচ মুদ্রণ করা হয়েছিল রাখালের। এরই মধ্যে বইটির চতুর্থ মুদ্রণ শেষ হয়ে গিয়েছে, এখন চলছে পঞ্চম মুদ্রণ।
লুৎফর হাসানঃ গ্রন্থমেলায় পাঠক প্রিয় এবং পাঠক ও ভক্তবৃন্দ পরিবেষ্টিত আরেকজন লেখকের নাম লুৎফর হাসান। এই লেখকের সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা ৩০। এবারের বইমেলায় দুহাতে লিখতে পারা সব্যসাচী এই লেখকের চারটি বই এসেছে। বই চারটি হলো, জারুল বনে রক্ত জবা (উপন্যাস), হাত রেখো না আমার এপিটাফে (কাব্যগ্রন্থ), পাখি তুমি গান (কাব্যগ্রন্থ), ডাকবাংলো রোড (কিশোর উপন্যাস)। বিগত মেলাগুলোর মতো এবারও তার বই পাঠকদের প্রিয় বইয়ের তালিকায় রয়েছে। তার বইগুলো কেমন বিক্রি হচ্ছে সেটা দেখতে আপনাকে কিছুই করতে হবে না। আপনি শুধু বইগুলো যে প্রকাশনীগুলো থেকে এসেছে ঐ প্রকাশনীগুলোর স্টলের সামনে গিয়ে কিছুক্ষন দাঁড়ালেই বুঝে যাবেন লেখক লুৎফর হাসান ও তার বইয়ের কাটতি সম্বন্ধে।
তবে বাংলা সাহিত্যের পাঠকপ্রিয় এই লেখকও কিন্তু ঐ গানের লাইনেরই লোক এবং সেখানেও তিনি তুমুল জনপ্রিয়। একাধারে গায়ক, গীতিকার ও সুরকার লুৎফর হাসানের গাওয়া ‘ঘুড়ি’ গানের জনপ্রিয়তার কথা কে না জানে? বাংলা সংগীতের ধুন্ধুমার জনপ্রিয় গানগুলোর একটি এই ঘুড়ি। সোমেশ্বর অলির লেখা চির আবেদনময়ি এই গান আজও যেন প্রতিটি তরুণের মনের কথা হয়ে হেটে বেড়াচ্ছে। তবে শুধু গায়ক না, গীতিকার সুরকার হিসেবেও অগণিত শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন বাংলা সংগীতকে। বাংলা সঙ্গীতকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যকেও বেশ রাজকীয় ভাবে সমৃদ্ধ করে চলেছেন লুৎফর হাসান।
ইশতিয়াক আহমেদঃ বাংলা সংগীতের বর্তমান সময়ের আরেক সফল গীতিকবি ইশতিয়াক আহমেদ। গানের মানুষ ইশতিয়াক আহমেদ শুধু গীতিকার হিসেবেই না, লেখক হিসেবেও বেশ সফল। কারণে অকারণে সহ বহু জনপ্রিয় গানের গীতিকবি ইশতিয়াকের এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে নিজস্ব পাঠক গোষ্ঠী যারা ইশতিয়াক আহমেদের বই কিনতে মেলায় আসে।
এবারের গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত বইয়ের নাম গতকাল। বইটি প্রকাশ করেছে অনিন্দ্য প্রকাশনী। ইশতিয়াকে বুদ পাঠকগণ লুফে নিচ্ছেন বইটি। বিগত মেলাগুলোর মতো এবারও তার বই পাঠকদের প্রিয় বইয়ের তালিকায় রয়েছে। সব মিলিয়ে ইশতিয়াক হোসেন লিরিকের ক্ষেত্রে যেমন গায়ক ও শ্রোতাদের পছন্দের, লেখক হিসদেবেও তেমনই পাঠক ও প্রকাশকদের পছন্দের।
এখানেই কিন্তু শেষ নয় গানের মানুষদের বইমেলা জয়ের গল্প। এই দলে আরও অনেকে আছেন যারা মেলায় পাঠকদের পছন্দের, যারা রাজত্ব করছেন বইমেলায়। এমন কয়েকজনের গল্প থাকছে আগামী পর্বে।