মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলায় ৪টি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে টাঙ্গাইলের ১১টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের গ্রামগুলো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। রাস্তা ঘাট ও ব্রিজ ভেঙে যাচ্ছে, প্লাবিত হয়ে পরছে নিমাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার পৌর এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, এসব মানুষ পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, যমুনা নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি হয়ে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত, ঝিনাই নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার এবং বংশাই নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধলেশ্বরী নদীর পানি ১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, জেলায় ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলার নিমাঞ্চল এবং সদর উপজেলার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্য কবলিত উপজেলাগুলো হল- টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, ভূঞাপুর, কালিহাতী, ধনবাড়ী, গোপালপুর, বাসাইল, মির্জাপুর, সখীপুর এবং ঘাটাইল। এ ১১টি উপজেলার ৭৯টি ইউনিয়নের অন্তত ৫৫৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে ৬টি পৌরসভা আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, এবারের বন্যায় ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬৭১ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৪৩ হাজার ৩০০টি। আর পানিবন্দি লোক সংখ্যা একলাখ ৭৩ হাজার ২শ’ জন। অপরদিকে ৭৬১টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এবং আরও আংশিক ২৮ হাজার ৮৯৫টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও দুইটি স্কুল নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আংশিক আরও ৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙনে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ এবং ৩৬টি প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই ১১টি উপজেলার ৬২১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, জেলায় এখন পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সম্পূর্ণ কাঁচা রাস্তা এবং ৬০০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অপরদিকে ৮১ কিলোমিটার পাকা রাস্তা আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও সম্পূর্ণ ৫টি ব্রিজ এবং আংশিক ৪৯টি ব্রিজ ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বন্যা দুর্গত এলাকার ৭৬৮৬টি টিউবওয়েল সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, ডুবে গেছে পানির নিচে। এতে এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। জেলায় মোট ৩৯টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এই আশ্রয় কেন্দ্রের লোক সংখ্যা ৩ হাজার ২০১ জন। ১৮টি গবাদি পশুও আশ্রয় নেয়। ১১৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৬০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অপরদিকে শিশু খাদ্য দুই লাখ টাকা এবং গোখাদ্য ছয় লাখ টাকা এবং শুকনা প্যাকেট ছয় হাজার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, প্রথম দফায় বন্যায় টাঙ্গাইলে ৩ হাজার ৮৩৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ২৭ হাজার ২৩৩ জন কৃষক। আর দ্বিতীয় দফায় বন্যায় এখন পর্যন্ত (শনিবার) ৮ হাজার ৪৬ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে বোনা আমন, রোপা আমন (বীজতলা), আউশ, সবজি, লেবু রয়েছে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, “আবারো নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামনে বন্যা পরিস্থিতি আরও ব্যাপক অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন এলাকার রক্ষাবাঁধ ভাঙন রোধে কাজ করা হচ্ছে। পানি সরে গেলে নদী ভাঙন তীব্র হবে।”