ক্যাম্পাসবাংলাদেশরাজনীতিসর্বশেষ নিউজ
‘অধ্যাপক রেজাউল হত্যার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে গণঅভ্যুত্থানের আলামত দেখতে পাচ্ছি’- রাবিতে ফজলে হোসেন বাদশা
শফিকুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, ‘অধ্যাপক রেজাউল হত্যার আগে তিন জন শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করার জন্য তারা দিন দিন আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। রেজাউল হত্যায় আমরা শোক পেয়েছি, কষ্ট পেয়েছি, সে শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। আমি মনে করি, এর বিরুদ্ধে একটা সর্বাতœক সংগ্রাম গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।’
শনিবার বেলা ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে রাবি শিক্ষক সমিতির আয়োজনে অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দকী হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এই শিক্ষক হত্যার পর শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলনের তরঙ্গ দেখতে পাচ্ছি, তা বংলাদেশে উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে। অধ্যাপক রেজাউল হত্যার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে গণঅভ্যুত্থানের আলামত দেখতে পাচ্ছি, তাতে রাজশাহীর জনগণও এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রাবির সকল বিভাগ, সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ আন্দোলনকে বেগবান করতে আপনারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একটা মঞ্চ তৈরি করবেন। সেই মঞ্চে শিক্ষকরা নেতৃত্ব দিবেন। সেই মঞ্চের কর্মসূচিকে আমরা সর্বাতœকভাবে সমর্থন করে যাবো। কারণ এই মৃত্যুই যেন শেষ মৃত্যু হয়Ñএটা আমরা কামনা করি।
পুলিশ প্রশাসনের সমালোচনা করে সাংসদ বলেন, আমরা অতীতে বই মেলার পাশে হত্যা করতে দেখেছি, টিএসসির পাশে দেখেছি। কিন্তু তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা সেসব ঘটনাকে মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে দেওয়ার একটা ষড়যন্ত্রমূলক কৌশল আজকে প্রশাসন অবলম্বন করছে।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিরা বলেন, নিজের নিরাপত্তা বলয় নিজেরা তৈরি করুন। কেন আপনারা চলবেন বন্দুক হাতে, আর আমাদের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে বলেন?Ñএটা কোন প্রজাতন্ত্রের বক্তব্য হতে পারেনা। আপনি পুলিশ প্রধান হতে পারেন, কিন্তু আপনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এটা ভূলে যাবেন না এবং এদেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনার বেতন, ভাতা, যাবতীয় পরিচালিত হয়ে থাকে। তাই দায়িত্বশীল হয়ে কথা বলা উচিত।’
সাংসদ আরও বলেন, আমরা শুধু কথায় শুনি যে, জঙ্গীবাদের সঙ্গে জিরো টলারেন্স। কিন্তু আমরা আজকে যদি জনগণের পক্ষে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করতে পারিÑ তবে সেটাই কার্যকর জিরো টলারেন্স হবে। কোন প্রশাসনের জিরো টলারেন্সের বক্তব্য কার্যকর হচ্ছে না।
মানববন্ধনে অধ্যাপক রেজাউল করিমের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ বলেন, ‘আমার বাবাকে কি কারণে হত্যা করা হয়েছে সেটা খোঁজার জন্য আমরা ব্যস্ত। তিনি আস্তিক ছিলেন না নাস্তিক ছিলেন এসব বিষয় নিয়ে সবাই মাথা ঘামাচ্ছেন। কিন্তু তাকে কে হত্যা করলো সেটা সেদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই।’
মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ্, লোক প্রশাসন বিভাগের সভাপতি আওয়াল হোসেন মোল্যা, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, আইন অনুষদের সাবেক ডিন বিশ্বজিৎ চন্দ, বাংলা বিভাগের সভাপতি অমৃত লাল বালা, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী প্রমুখ। সমাবেশে বিচারের দাবিতে বক্তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে থেকে একটি মৌন মিছিল বের করে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ‘সাবাস বাংলা’ ভাস্কর্য কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় তারা। পরে সেখান থেকে তারা ‘মুকুল প্রতিবাদ ও সংহতি মঞ্চে’ গিয়ে সমাবেশ করে। এ সমাবেশে অর্থনীতি বিভাগ, লোকপ্রাশাসন বিভাগ, আইন বিভাগ, ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ মিছিল নিয়ে এসে যোগ দেয়। পরে সমাবেশ শেষে ১১টায় শিক্ষক সমিতির মানববন্ধনে যোগ দেয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী। এসময় প্যারিস রোডে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী যোগ অংশগ্রহণ করে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করেছে ফলিত গণিত বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ, ভাষা বিভাগ, বাংলা বিভাগ, প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ। এদিকে বেলা ১২টায় প্যারিস রোডে হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদী সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে অরণী সাংষ্কৃতিক জোট।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ এপ্রিল শনিবার নগরীর শালবালাগান এলকায় অধ্যাপক রেজাউল করিমকে হত্যা করে দুবৃত্তরা। এরপর থেকে বিচারের দাবিতে আন্দোল করে ।