জাতীয়বাংলাদেশরাজনীতিসর্বশেষ নিউজ
টাঙ্গাইলে আওয়ামীলীগে খান-সিদ্দিকী পরিবারের দাপট শেষ: বিএনপিতে পিন্টু জেলে, মাঠে আজাদ-টুকু
মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে: টাঙ্গাইলের রাজনীতি এক সময় ছিল ‘সিদ্দিকী’ ও ‘খান’ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। বর্তমানে পাল্টেছে প্রেক্ষাপট। সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী এখন দল ছাড়া। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে ধরে রেখেছেন তার সখীপুর। তিনি আবার কালিহাতী থেকেও নির্বাচন করতে পারেন। অবশ্য তার ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী টিকে থাকার চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগে।
এর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরপর তিনবার নির্বাচন করে হেভিওয়েট প্রার্থীর কাছে অল্প ব্যবধানে হেরেছেন। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় আসামি হয়ে জেলহাজতে আমানুর রহমান খান রানা এমপি। তার তিন ভাই সাবেক পৌর মেয়র শহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও সাবেক ছাত্রনেতা সানিয়াত খান বাপ্পা পলাতক রয়েছেন।
আর টাঙ্গাইল-১ আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ও তার বোন একই দলের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা। একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু এখনও জেলে। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন না করতে পারলে ছোট ভাই ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুই নির্বাচন করতে পারেন। অবশ্য ভাই টাঙ্গাইল-২ এ নির্বাচন করলে টুকু নির্বাচন করবেন টাঙ্গাইল-৫ এ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনই উত্তাপ শুরু হয়েছে টাঙ্গাইলে। সংসদীয় ১৩০, ১৩১, ১৩২, ১৩৩, ১৩৪, ১৩৫, ১৩৬ ও ১৩৭ মোট ৮টি আসনে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরেও অন্য দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক এমপির। একই আসনে তার বোন ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপাও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সরোয়ার আলম খান আবুও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপি থেকে এবারও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ফকির মাহবুব আনাম (স্বপন ফকির) ও বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, মধুপুর পৌরসভার মেয়র সরকার শহীদ ও সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সামসুজ্জামান সুরুজের নাম নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে চিত্র প্রযোজক নুরুল ইসলাম রাজ, ধনবাড়ি উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. মজনু মিয়া ও বিজেপি (মঞ্জু) থেকে আবু সাঈদ খান মিন্টুর নাম শোনা যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল-২ (ভুঞাপুর-গোপালপুর) এ আসনে ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে দলীয় মনোনয়ন নাও চাইতে পারেন। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপ্রত্যাশী হতে পারেন তার ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ উপ-কমিটির সহ-সভাপতি মশিউদজ্জামান খান রুমেল। এ ছাড়াও ওই আসনে প্রার্থী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, জেলা আওয়ামী লীগের পরিবেশ বিজ্ঞান ও গবেষণা সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনি ও গোপালপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু ও লে. কর্নেল (অব.) মির্জা হারুন-অর-রশিদ বীর প্রতীক। বিএনপি থেকে দলের কারাবন্দী ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু মনোনয়ন চাইতে পারেন। তিনি জেল থেকেই তৎপরতা চালাচ্ছেন। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন না করতে পারলে সেক্ষেত্রে এ আসনে যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু কিংবা তার আরেক ভাই জেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফা দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে বর্তমান এমপি আমানুর রহমান খান রানা এমপি মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় আসামি হয়ে জেলহাজতে। নানা বিতর্কে তিনি দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে তার স্থানে তার স্ত্রী ফরিদা বেগম দলীয় প্রার্থী হওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ ছাড়াও ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহŸায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু, যুগ্ম আহŸায়ক মাসুদুর রহমান আজাদ, সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদান করা সৈয়দ আবু ইউসুফ তুহিন আবদুলাহর নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লুতফর রহমান খান আজাদ। তবে জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মাইনুল ইসলামের নামও শোনা যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) এ আসন থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী এমপির নামই শোনা যাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য আবু নাসের, কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠাণ্ডু, ইঞ্জিনিয়ার মো. লিয়াকত আলী, অ্যাডভোকেট সাবিনা ইয়াসমিন ইব্রাহীমের নামও শোনা যাচ্ছে। এ আসন থেকে হেভিওয়েট প্রার্থী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমও নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল হালিম, কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শুকুর মাহমুদ, বিএনপির মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি বাদলুর রহমান বাদল ও ঢাকার কালিহাতী সমিতির সভাপতি শহিদুল হক চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মো. ছানোয়ার হোসেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তবে এবার আওয়ামী লীগ হয়ে মনোনয়ন চাইতে পারেন মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানকারী সিদ্দিকী পরিবারের মুরাদ সিদ্দিকী। পরপর তিনটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অল্প ব্যবধানেই হারেন তিনি। সিদ্দিকী পরিবার থেকে আওয়ামী লীগের তরুণ প্রার্থী হিসেবে তারই প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরনের নামও শোনা যাচ্ছে। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্র্যাশীরা হলেন, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান।
তবে টাঙ্গাইল-২ এ আবদুস সালাম পিন্টু নির্বাচন করলে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। এ ছাড়াও বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু মনোনয়নপ্রত্যাশী। জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক এমপি ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল কাশেম ও জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকের নাম শোনা যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি খন্দকার আবদুল বাতেন দলের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এ ছাড়াও ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আহসানুল ইসলাম টিটু, কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ আবদুর রহিম ইলিয়াস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তারেক শামস্ হিমু ও ইনসাফ আলী ওসমানীর নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপি থেকে সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী নূর মোহাম্মদ খান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রবিউল আওয়াল লাভলু ও আলী ইমাম তপন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হামিদুল হক মহন, জেলা বিএনপি সদস্য আরফান আলী মোলা, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সদস্য আমিনুল ইসলাম মঞ্জু ও জেলা বিএনপির সদস্য অধ্যাপক ইউসুফ আলীর নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়াও এলডিপির প্রার্থী হিসেবে মঞ্জুরুল ইসলামের নাম শোনা যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) এ আসন থেকে ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান এমপি একাব্বর হোসেন দল থেকে আবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ছাড়া জেলা যুব লীগের সহ-সভাপতি ও টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক খান আহমেদ শুভ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম প্রচার সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মেজর (অব.) খন্দকার এ হাফিজ, উপজেলা চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদের নামও শোনা যাচ্ছে। বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন, সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা সাঈদ সোহরাব। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির সদস্য ফিরোজ হায়দার, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি একে আজাদ স্বাধীনের নাম শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি থেকে নন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহিরুল ইসলাম জহিরের নাম শোনা যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) এ আসনে নির্বাচনে অংশ নেবেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক এমপি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। সেই ভাবেই সখীপুর গোছাচ্ছেন তিনি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি অনুপম শাহজাহান জয় আবারও দলের মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক জিএম আব্দুল মালেক মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত সিকদার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য অধ্যক্ষ সাঈদ আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট আতাউল মাহমুদের নামও শোনা যাচ্ছে। বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান দলের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এ ছাড়াও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা ওবায়দুল হক নাসির, বর্তমান বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদ মুন্সি, উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মো. হাবিব, সাবেক ছাত্রদল নেতা কৃষিবিদ দেওয়ান শফি শাওন ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি জিয়াউল হক শাহীনের নাম শোনা যাচ্ছে।