বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

ঝিনাইদহে যে পরিবারে ছেলে সন্তান বাঁচে না…!

pic (2)জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহে মেহেরপুরের পর এবার দুরারোগ্য “বংশগত মাংসপেশী শক্তি দুর্বলতা” রোগে আক্রান্ত একটি পরিবারের সন্ধান মিলেছে। ইংরেজিতে এই রোগকে বলা হয় “ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি”। এই রোগ হলে পরিবারে কোন ছেলে সন্তান বাঁচে না। ২০ বছর পুর্তির আগেই ওই পরিবারের ছেলে সন্তানরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এমন একটি পরিবারের সন্ধান মিলেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভেন্নতলা গোপিনাথপুর গ্রামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভেন্নাতলা গ্রামের মজিবর রহমান স্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু বরণ করলেও তার দুই সন্তান বাবু ও আব্দুল সাত্তার ১৫ বছর বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে। মজিবর রহমানের একমাত্র মেয়ে মঞ্জু বেগমের তিন ছেলে সন্তানের অবস্থাও একই রকম করুন। এরমধ্যে তার বড় ছেলে মনিরুল ইসলাম ১৮ বছর পুর্তির আগেই মৃত্যু বরণ করেছে। এখন বাকী দুই সন্তান আনারুল ইসলাম (১১) ও সাবিকুল ইসলাম (৯) প্রতিবন্ধি হয়ে বিছানায় মৃত্যুর গুনছে। মজিবর রহমানের স্ত্রী সিতা বেগম জানান, তার তিন সন্তানের মধ্যে দুইটি ছেলে ও একটি মেয়ে। বড় ছেলে বাবু ১৮ বছরে মৃত্যু বরণ করেন। এরপর ছেলে ছেলের বয়স ১৬ বছর হলেও সেও মারা যান।

সিতা বেগম আরো জানান, একমাত্র মেয়ে মঞ্জু বেগমকে রফিকুল ইসলামের সাথে বিয়ে দিয়ে ঘর জামাই রাখা হয়েছে। জামাই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সিতা বেগমের ভাষ্যমতে তার দুই ছেলের বয়স যখন ৬ বছর, তখন থেকেই তাদের দুই পা অবশ হয়ে ন্যাংড়া হয়ে যায়। এরপর আস্তে আস্তে দুই হাত অকেজো হয়ে বিছানাগত হয়ে পড়ে। ছেলেদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন চিকিৎসকের দারস্থ হয়েও কোন ফল পাননি বলে সিতা বেগম জানান। এখন দুই ছেলে আনারুল ইসলাম ও সাবিকুল ইসলাম প্রতিবন্ধি হয়ে বিছানায় মৃত্যুর গুনছে।

চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন, এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই, এটা জন্ম ব্যাধি। মঞ্জু বেগম জানিয়েছেন, তাদের বংশে মেয়ে সন্তানরা এই রোগে আক্রান্ত হননা। তিনি ও তার দুই মেয়ে রাবিনা খাতুন (১৪) ও সাবিনা খাতুন (৯) সুস্থ আছেন। রাবিনা ক্লাস নাইনে ও সাবিনা ক্লাস থ্রিতে পড়াশোনা করছে। কেবল পুরুষরাই এই রোগে আক্রান্ত হন বলে মঞ্জু বেগম জানান।

এ বিষয়ে এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার মহিউদ্দীন জানান, আমি পরিবারটিকে চিনি। এই পরিবারে কোন ছেলে সন্তান বাঁচে না। অজ্ঞাত রোগটির চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এখন ভিটেবাড়ি ছাড়া তাদের কিছুই নেই।

ভেন্নতলা গ্রামের মাতুব্বর লতাফৎ হোসেন জানান, মজিবর রহমানের দুই ছেলে ও তার মেয়ের তিন ছেলের চিকিৎসার জন্য তিনি নিজে দুইবার ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু রোগটির উপযুক্ত কোন চিকিৎসা মেলেনি।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ শহরের ক্রিসেন্ট প্যাথলজির প্রাইভেট প্রাকটিশনার ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জন ডাঃ নাজমুল হুদা জানান, ৭ মাস আগে আমি চিকিৎসা দিয়েছি ঠিকই, কিন্তু এখন রোগটি সম্পর্কে আমার সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তবে আমি তাদের ঢাকার পিজিতে যাবার পরামর্শ দিয়েছিলাম।

তবে মঞ্জু বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলাম জানান, আমার দুই সন্তান আনারুল ইসলাম ও সাবিকুল ইসলামকে ঢাকার পিজিতে ভর্তির জন্য ডাঃ নাজমুল হুদা পরামর্শ দিলেও টাকার অভাবে আমরা যেতে পারিনি।

এদিকে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস হাট গুটিয়ে বসে আছে। সাংবাদিকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে তারা একটি মেডিকেল টিম গঠনরে আশ্বাস দিলেও ৭ মাসেও কোন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাঃ রাশেদা সুলতানা জানান, যোগদানের পর এ বিষয়টি তো আমাকে কেও জানায় নি।

উল্লেখ্য মেহেরপুর শহরের তোফাজ্জল হোসেন নামে জনৈক ব্যক্তির তিন সন্তান ‘ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি’ রোগে আক্রান্ত হলে তাদেরকে ভারতের মুম্বাই শহরের নিউরোজেন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই রোগকে বাংলায় বলা হয়-বংশগত মাংসপেশী শক্তি দুর্বলতা। হরমোন বা জিনগত কারণে এ রোগ হয়। চিকিৎসকদের মতে শুধু ছেলেদের ক্ষেত্রে এই রোগ দেখা দেয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে এখনও এই রোগের চিকিৎসা বা প্রতিশোধক আবিষ্কার হয়নি।

Tags

Related Articles

Close