বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

মধুপুরের আনারসে প্রয়োগ হচ্ছে ক্ষতিকারক কেমিকেল: দেখার কি কেউ নেই!

pine appleমুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে: টাঙ্গাইলের মধুপুরের আনারস বাগান গুলোতে দেদারসে প্রয়োগ করা হচ্ছে মানবদেহের ক্ষতিকর ওষুধ। মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অল্প সময়ে বেশি লাভ করার আশায় কৃষকরা দেদারসে করছেন এই মরনাস্ত্র ওষুধের প্রয়োগ। কৃষি বিভাগ কর্তৃপক্ষের নজর দারীর অভাব ও হাতের নাগালে ক্ষতিকর ওষুধ পাওয়াকেই দায়ী করছেন কৃষকরা।

ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগে দ্রæত আনারসের ফলন বৃদ্ধি পেলেও আতঙ্কে দিন দিন এর চাহিদা কমে যাচ্ছে সারা দেশে। এর ফলে মধুপুর হারাচ্ছে আনারসের অতীত ঐতিহ্য। লোভনীয় ও রসালো এই আনারস খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরছে ক্রেতারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে টাঙ্গাইল জেলায় মোট আনারসের চাষ হয়েছে ৮হাজার হেক্টর জমিতে আর এর উৎপাদন লক্ষ মাত্রা রয়েছে ৩ লাখ মে.টন।  গত বছর এর চাষ হয়েছিল ৭ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ২লাখ ৫০ হাজার মে.টন। সরেজমিন ঘুড়ে দেখা যায় আনারস চাষ প্রদ্ধতির ভয়াবহতা, মধুপুর উপজেলার বিস্তীর্ন এলাকায় বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে জলডুবিসহ নানা প্রজাতির রসালো আনারস। দেশ জুড়ে এ অঞ্চলের আনারসের রয়েছে সুখ্যাতি। এ উপজেলার চার পাশে দেখা মেলে শুধু আনারসের বাগান আর কাঁচা পাঁকা রসালো আনারস। উপজেলার জলছত্র ও পচিশ মাইল এলাকায় এ চাষের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা গেছে।

দেশ জুড়ে প্রতিষ্ঠিত এ অঞ্চলের আনারসের সুখ্যাতি এখন আধুনিক চাষ প্রদ্ধতিতে বিলুপ্ত হতে বসেছে। আধুনিক চাষের দ্রæত ও অধিক ফলন প্রদ্ধতির কুফলে ঐতিহ্য হারাচ্ছে এ জেলার সুস্বাদু আনারস। আনারস চাষে ব্যবহার হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক হরমোন, সার ও কিটনাশক। স্বাভাবিক ভাবে যে আনারস বড় হতে সময় লাগে ৫/৬ মাস সেটি ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে বড় ও পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন মাত্র ৩/৪ মাসে।

চাষ প্রদ্ধতি নিয়ে কথা হয় উপজেলার পঁচিশ মাইল গ্রামের কৃষক রুস্তম মিয়ার সাথে। ৩০ হেক্টর জমিতে তিনি করেছেন এই আনারসের আবাদ। এ সময় আনারসের চাষ প্রদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দ্রæত সময়ে বড় ও পাঁকানোর জন্য আনারসের কুড়ি আসার সময় থেকে পাঁকা পর্যন্ত ৩ থেকে ৪ বার বাগানে প্রয়োগ করা হচ্ছে হরমোন। এই হরমোন প্রয়োগের ফলে আনারস দ্রæত বড় হওয়াসহ দেখতে খুব সুন্দর হয়। এর পাশাপাশি জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার হচ্ছে সার। পোকা ও বালাই দূর করতে ব্যবহার করা হচ্ছে কিটনাশক। এ ওষুধ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জানা স্বত্তেও অল্প সময়ে ফলন ও অধিক লাভের আসায় কৃষকরা এ ওষুধ ব্যবহার করছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া কৃষি কর্তৃপক্ষের নজরদারী ও হাতের নাগালে ক্ষতিকর ওষুধ পাওয়াকেই দায়ী করেন তিনি। এটি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত নজরদারী ও কৃষিতে ব্যবহৃত ওষুধ কোম্পানী গুলোকে কঠোর নিয়মনীতির মধ্যে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। উপজেলার জলছত্র গ্রামের কৃষক রহিম মিয়া জানান, চলতি বছরে তিনি ১০ একর জমিতে আনারসের আবাদ করেছেন। এ অঞ্চলটি পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় এখানে আনারসের আবাদ ভালো হয়। যুগের যুগের পর তারা আনারসের আবাদ ও ব্যবসা করে আসছেন। প্রাকৃতিক ভাবে আনারসের ফলন উঠতে তাদের সময় লাগে ৫/৬ মাস। এর আকার ছোট এবং দেখতে কালো হয়। যার সাধ ও মানের রয়েছে দেশব্যাপী সুখ্যাতি। প্রাচীন প্রদ্ধতিতে আনারস পাঁকাতে ৫/৬ মাস সময় লাগে। তাই এই প্রদ্ধতির ব্যবহার বন্ধ করে এ অঞ্চলে চালু হয়েছে আধুনিক প্রদ্ধতি। আধুনিক এই চাষ শাস্ত্রের মাধ্যমে আনারস বড় ও পাঁকাতে সময় লাগে ৪/৫ মাস। তবে এ চাষ প্রদ্ধতিতে ব্যবহার হয় মানবদেহের ক্ষতিকারক হরমোন, সার ও কিটনাশক। তবে রমজান মাসে আনারসের দাম ভালো পাওয়া যায় বলে তিনি দ্রæত বড় ও পাঁকানোর জন্য আনারস বাগানে হরমোন, সার ও কিটনাশক ব্যবহার করেছেন। এ প্রদ্ধতিতে উৎপাদিত আনারস দেখতে সুন্দর ও বড় হয়। তবে এর সাধ ততটা ভালো নয়। ক্রেতাদের কাছে দেখতে সুন্দর ও বড় আনারসের চাহিদা বেশী থাকায় এ বছর তিনি এ বছর আধুনিক প্রদ্ধতিতে আনারসের আবাদ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে বলেও জানান তিনি। ওষুধ প্রয়োগে আনারসের মান নষ্ট হওয়াসহ মানব দেহের ক্ষতির বিষয়টি জানা স্বত্তেও টাকার জন্য এভাবে আনারসের আবাদ করছেন তিনি।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডাঃ সৈয়দ ইবনে সাঈদ বলেন, ক্ষতিকর কেমিকেল প্রয়োগের ফলে শুধু আনারস নয় যে কোন ফল খেয়ে মানুষের অসুখ হতে পারে। আনারসে ক্ষতিকর কেমিকেল প্রয়োগ স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারন বলেও জানান তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আবুল হাশিম কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগ না করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগীতায় প্রতিনিয়তই কাজ করা হচ্ছে

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহবুব হোসেন জানান, আনারসে মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ প্রয়োগ না করার জন্য ব্যাপক প্রচারনা এবং কৃষি সমাবেশ করা হয়েছে। এ স্বত্তেও যদি আনারসের ওষুধ প্রয়োগ বন্ধ না হয়ে থাকে তবে দ্রæত ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অবৈধ কেমিকেল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Related Articles

Close