বাংলাদেশসর্বশেষ নিউজ

গোপালপুরে যৌতুকের বলি হলো এক সন্তানের জননী রাশিদা

gopalpur dowryমুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে : টাঙ্গাইলের গোপালপুরের ভূটিয়া গ্রামে রাশিদা বেগম নামের এক সন্তানের জননী যৌতুকের বলি হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের পর স্বামী সোনা মিয়া ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন জোর পূর্বক মুখে বিষঢেলে বৃহস্পতিবার রাতে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার মূলহোতা ঘাতক স্বামী পালিয়ে গেছে। এঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহতের পিতা।

জানা যায়, পাশ^বর্তী মধুপুর উপজেলার কাকরাইদ জয়তেতুল গ্রামের আরশেদ আলির মেয়ে মোছা. রাশিদা বেগম (২২)’র সাথে উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের ভুটিয়া তালতলা গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে সোনা মিয়া (২৮)’র সাথে ৫বছর আগে সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে বছর দুই আগে তাদের ঘর আলোকিত করে রাসেল নামের একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করে।

রাশিদার বাবা অভিযোগ করেন, বিয়ের সময় মেয়ের সুখের জন্য এককালীন ৪০হাজার, রাশিদার শ্বশুর মান্নানের গলার চিকিৎসার জন্য ১০হাজার এবং বিভিন্ন সময়ে সাংসারিক প্রয়োজন দেখিয়ে মোট ৮০ হাজার টাকা জামাতা সোনা মিয়া এবং রাশিদার শ্বশুর মান্নানকে পর্যায়ক্রমে যৌতুক হিসেবে দেয়া হয়।

রাশিদার স্বামী সোনা মিয়া নানা রকম নেশা এবং জুয়া খেলে উক্ত টাকা ফুরিয়ে ফেললে গার্মেন্টে চাকুরির করার উদ্দেশে ঢাকায় চলে যায়। ঢাকায় গিয়ে সে গোপনে ঘাটাইলের এক মেয়েকে বিয়ে করে চুপিচুপি সংসার চালাতে থাকে। মাঝেমধ্যে জামাই বাড়িতে এসে সে অটোরিক্সা কিনবে বলে রাশিদাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। টাকা না পেয়ে রাশিদার উপর অমানবিক শারীরির নির্যাতন চালায় বেশ ক’বার। গত একমাস আগেও ঢাকা থেকে জামাই বাড়িতে এলে টাকার জন্য রাশিদাকে বুকের উপর লাথি এবং গলা টিপে জখম বানালে রাশিদাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। খাবার খেতে গলায় কষ্ট হলে রাশিদাকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এক ক্লিনিকে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করালে ডাক্তার গলা এবং বুকের ভেতর জখমের ভয়ঙ্কর রকম তথ্য দেন। এঘটনায় গত ১৫ মার্চ থানা পুলিশকে একটি  লিখিত অভিযোগ করেন।

পরবর্তীতে ২০ দিন পর রাশিদার শ্বশুর মান্নান ও শ্বাশুরী অজুফা মেয়ের উপর আর কোন রকম অত্যাচার হবে না এই মর্মে রাশিদাকে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসেন।

১৪ এপ্রিল বিকেলে শ্বশুর মান্নান ও শ্বাশুরী অজুফা কাকরাইদ জয়তেতুল রাশিদার বাড়িতে অটোরিক্সার টাকা আনতে গেলে রাশিদার বাবা আরশেদ আলী এই মূহুর্তে টাকা না দিতে পারায় রাশিদার চাওয়া কিছু হলুদ, আধা ও আনুসাঙ্গিক কিছু জিনিসপত্র নিয়ে চলে আসে। একই দিন রাত আনুমানিক ১০ টায় রাশিদার স্বামী বাড়ি থেকে মোবাইল ফেনে জানানো হয়, রাশিদা লোম নাশক বনানী ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
রাশিদা বিষপান করেছে এই প্রচারণা চালিয়ে আশেপাশের লোকজন নিয়ে গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে প্রবেশ না করেই গেট থেকে মৃত রাশিদাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনলে মূর্হুতেই ঘাতক স্বামী গাঁ ঢাকা দেয়।

গোপালপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুল জলিল জানান, ‘এ খবরটি জানতে পেরে আমিসহ গোপালপুর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ থানায় নিয়ে এসে ময়না তদন্তের জন্য লাশ টাঙ্গাইল মর্গে পাঠানো হয়। পালিয়ে যাওয়া ঘাতক স্বামীকে আটক করতে থানা পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

এঘটনায় নিহত রাশিদার পিতা আরশেদ আলি বাদি হয়ে যৌতুকের জন্য আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ায় ৫জনকে আসামী করে গোপালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-০৮, (তারিখ: ১৫ এপ্রিল, ২০১৬ইং)।

Related Articles

Close